প্রেক্ষাপট

মহান দার্শনিক রুশো বলেছিলেন 'বিশ্ববিদ্যালয় হবে শহর থেকে দূরে নিজর্ন কোনো জায়গায়, যেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল, পরিবেশ হবে মুক্ত, শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠবে অপরূপ এক প্রকৃতির কোলে, প্রকৃতি হবে তাদের শিক্ষক'। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেন গড়ে উঠেছে দার্শনিক রুশোর এমন ধারনা নিয়ে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলায় আনুমানিক ২১ একর পাহাড়ঘেরা সবুজ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়'। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শুরু থেকেই এ প্রতিষ্ঠান জাতির জন্য সুনাগরিক তৈরির নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের আধার মনোরম ক্যাম্পাসে নিয়মিত পাঠদান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনে আলোকবর্তিকা ভূমিকায় অবতীর্ণ ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠ।

প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আলোড়িত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছিলো বীরত্বপূর্ণ অবদান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ পদযাত্রায় তৈরী হয়েছে অজস্র কীর্তিমানের; যাঁদের মেধা, সৃজনশীলতা ও অবদানে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। এ বিদ্যাপাঠের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব যোগ্যতায় যেমনি দেশে-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত, তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশে উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ও গবেষনায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছে। এভাবে জ্ঞান শিক্ষার আলোকে ক্রমাগত উদ্ভাসিত হয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

প্রতিষ্ঠার অর্ধশতাব্দীর পথ পরিক্রমায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রজন্মের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত প্ল্যাটফর্ম গঠন ছিল দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত। এমন বাস্তবতায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সকল প্রজন্মের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একই প্লাটফর্মে সুসংগঠিত করার চূড়ান্ত সুযোগ সৃষ্টি হয় ২০১৬ বিশ্ববিদ্যালয় 'সুবর্ণ জয়ন্তী' উদযাপন ঘিরে। ২০১৬ সালের ১৭ ও ১৮ নভেম্বর দুদিন ব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সুবর্ণ জয়ন্তী' উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজেদের মধ্যে নতুনভাবে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। এভাবেই তৈরি হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের লালিত স্বপ্নের একক প্লাটফর্ম 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন' গঠনের প্রেক্ষাপট।